পর্যটকদের আকর্ষণ লাভ পয়েন্ট
কাপ্তাই হ্রদ ঘেঁষা ও পাহাড়ের সমারোহ এ সড়কটিকে নিয়ে গেছে এক অনন্য পর্যায়ে। মনে হবে, এটি দ্বিতীয় সিঙ্গাপুর। সবুজ প্রকৃতি আর সুবিশাল জলরাশির অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত সড়কটি মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমিদের। মন চাইবে আঁকা-বাঁকা এ সরু সড়কে হারিয়ে যেতে। বিকেল শেষে সূর্য যখন পাহাড়ের মাঝখানে লুকিয়ে পড়ে তা বিমোহিত করে ঘুরতে আসা পর্যটকদের। সড়কটির দুপাশে রয়েছে উপজাতিদের ছোট ছোট দোকান।
যেখানে মিলবে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার আর তাদের উৎপাদিত ফলমূল। তিন থেকে চারটি ব্রিজ অতিক্রম করলে পৌঁছে যাবেন ‘বড়দাম’। দেখতে পাবেন স্বর্ণের রঙে মোড়ানো একটি বৌদ্ধ মন্দির। এছাড়াও কাপ্তাই হ্রদের পানির মধ্যে রয়েছে সুউচ্চ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু বনভান্তের স্মৃতিস্তম্ভ। যেখানে সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের জন্মস্থান। এছাড়াও সড়কের পাশে তৈরি করা হয়েছে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস।
এছাড়াও এই সড়কটি দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে কাপ্তাই উপজেলায় যাতায়াত করা যায়। এই সড়কটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বেসরকারি বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্যে অন্যতম বড়গাঙ, রাইন্যা টুগুন, বেরান্নে লেক এবং বাগী লেক ভ্যালী। বেড়ান্নে ক্যাফেটেরিয়ায় কফি পান করতে করতে উপভোগ করতে পারবেন কাপ্তাই হ্রদের শান্ত শীতল সৌর্ন্দয। সেখানে পাহাড়ীদের তৈরি অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থাও আছে। আর ব্যাম্বু চিকেন, হ্রদের মাছসহ বিভিন্ন স্থানীয় খাবার যদি খেতে চান তাহলে চলে আসতে পারেন ‘বড়গাঙ রিসোর্টে। সেখানে রাত্রী যাপন করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) রাঙ্গামাটির সদর উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭ সালে ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের ফলে সড়কটিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে এই সড়ককে আকর্ষণীয় করে তুলতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সড়কে তিনটি নতুন সেতুসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটিকে দুই লেনে উন্নত করা হয়েছে এবং আগামী জুন মাসের মধ্যে সড়কটির কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।
পাহাড়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ব্রিজ
রাঙ্গামাটি শহরের স্থানীয় বাসিন্দা রুপেন ত্রিপুরা বলেন, আসাবস্তী হয়ে যে সড়কটি কাপ্তাই পর্যন্ত গেছে তা স্থানীয়দের জন্য খুবই উপকৃত হয়েছে। এই সড়কটি মাঝখানে কিছুদিন চলাচলের অনুপযোগী ছিল। কিন্তু বর্তমানে সড়কটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। ফলে প্রতিদিন তারার বিকেলে আসামবস্তী হয়ে কাপ্তাই সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করতে পারেন।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা মহসিন কবির জানান, পরিচিত এক বন্ধুর কারণে প্রথম এখানে আসা। যদি আগে জানতাম এখানের পরিবেশটা এত মনোরম মুগ্ধকর তাহলে এখানেই সবার আগে আসতাম।
ঢাকার নারায়গঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা সিয়াম জানান, যতবারই রাঙ্গামাটি ঘুরতে যায়, একবার হলেই ঐ সড়কে ঘুরতে যেতে হয়। যারা রাঙ্গামাটি এসে এ সড়কে ভ্রমণ না করেই চলে যায় তাদের রাঙ্গামাটি ভ্রমণ বৃথা। পর্যটকদের একবার হলেও এখানে ঘুরতে আসা উচিত।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী জানান, কাপ্তাই আসামবস্তী সড়কের ১৮ কিলোমিটার সড়কটি বর্তমানে দুই লেনে উন্নীত হয়েছে। রাঙ্গামাটি এলজিইডির জন্য এই সড়কটি একটি ট্রেড মার্ক। এই সড়কটি রাঙ্গামাটিতে আসা ট্যুরিস্টদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি আরো জানান, এই সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বড়াদম এলাকায় নতুনভাবে নির্মিত করা হয়েছে লাভ পয়েন্ট। যা এর মধ্যে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
রাঙ্গামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের(এলজিইিডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি জানান, রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাই যাওয়ার জন্য এটি হচ্ছে একটি বিকল্প সড়ক। ফলে রাঙ্গামাটি থেকে কাপ্তাইয়ের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার কমে গেছে।
তিনি আরো জানান, রাঙ্গামাটিতে আসা পর্যটকরা এই সড়ক দিয়ে ভ্রমণ করলে লেক এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করতে পারবে। বর্তমানে এই সড়ককে ঘিরে নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে। যা রাঙ্গামাটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই সড়কটি। আগে এই সড়ক দিয়ে কাপ্তাই যেতে যেমনি সময় লাগতো তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ফলে নিরাপদ যাতায়াতসহ পর্যটকদের চলাচলের কথা চিন্তা করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এই সড়কটি দুই লেন করার উদ্যোগ নিয়েছে।
ডেইলি-বাংলাদেশ/এসআরএস
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস